দু’দিনের ছুটিতে ভাবছেন কোথায় যাবেন! ঘুরে আসুন পেলিং
কাজ করতে হবে আবার ঘুরতে ফিরতেও হবে। নয়ত আমাদের বাঙালীদের ঠিক কাজের উৎসাহ আসে না ! তাই অফিস থেকে যদি মাত্র দু-দিনের ছুটি কোনোভাবে ম্যানেজ করা যায়, ঘুরে আসতে পারেন পেলিং।
কীভাবে যাবেন : ট্রেনে করে শিলিগুড়ি যেতে পারেন, তারপর ছোট গাড়ি ভাড়া করে আপার পেলিং। আবার ধর্মতলা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার বাসে সন্ধ্যায় উঠে, পরের দিন ভোরবেলায় শিলিগুড়ি নেমে, ছোট গাড়িতে প্রায় ৩ ঘন্টার পথ পেরিয়ে আপার পেলিং-এ। এখানে জানিয়ে রাখি ধর্মতলা থেকে যে বাসগুলি ছাড়ে,সেগুলোতে স্লিপার এবং সিটিং দুরকম সুবিধেই পাওয়া যায়।
পেলিং যাওয়ার পথে একটা টানেল ক্রস করতে হয়। কেউ কেউ একে হন্টেড টানেলও বলে। তবে, ভূতের দেখা পাওয়া মুশকিল।
গ্যাংটকের থেকে পেলিং এর উচ্চতা বেশি, প্রায় সাত হাজার দুশো ফুট। তাই ঠান্ডাও এখানে একটু বেশি। লোয়ার, মিডল ও আপার এই তিন ভাগে বিভক্ত পেলিং। আপার পেলিং-এ হেলিপ্যাডেই কয়েকটা হোটেল রয়েছে। ওগুলোতে থাকলে, কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব ভিউ প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। হতবাক করে দিয়ে আকাশের গায়ে ঝলসে উঠবে কাঞ্জনজঙ্ঘা তার সঙ্গীসাথী শৃঙ্গ কুম্বকামা, কোকতাং, রাথোং, ফ্রে পিক, কাব্রু, গোয়েচা পিক, সিম্ভো, প্যান্ডিম এদের নিয়ে।
আশপাশের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি সম্পর্কেও আপনাদের জানিয়ে রাখি।
কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত– ইউকসোম থেকে 10 কিমি এবং পেলিং থেকে 24 কিমি দূরে, কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত হল একটি অত্যাশ্চর্য জলপ্রপাত যা সিকিমের সুন্দর পাহাড়ী শহর পেলিং-এ অবস্থিত। এটি সিকিমের বৃহত্তম জলপ্রপাতগুলির মধ্যে একটি এবং প্রধান পেলিং পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি।রাস্তা থেকে এই প্রপাতের আসল রূপ চোখে পড়ে না। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে হয় কিছুটা। এইখানে প্রপাতের ফেনিল জলরাশি প্রবল গর্জনে নীচে নেমে আসছে। পিচ্ছিল পথ। এখানে রোপ স্লাইডিংও করা যায়। এখানে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা, আর রোপ স্লাইডিং করতে লাগবে আরো ১০০ টাকা।
খেচুপেরি লেক বা খেচিওপালরি লেক– পেলিং থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগে গাড়িতে। পাথুরে রাস্তায় ঝাঁকুনি খেতে খেতে যেতে হবে। গাড়ি যেখানে থামবে, সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটা পথ। পথের দু’ধারে নিবিড় গাছপালা। সূর্যের আলো ঢোকে না বলা যায়। ভিজে ভিজে স্যাঁতসেঁতে চারদিক। হ্রদের চারপাশে পাহাড়। হ্রদটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অসাধারণ তা নয়, এর ধর্মীয় তাৎপর্যও আছে। এর স্ফটিক জলের কাছে যা প্রার্থনা করা হয় তাই পূর্ণ হয় এমনই ওখানকার প্রচলিত বিশ্বাস। অজস্র প্রার্থনা পতাকা প্রোথিত রয়েছে হ্রদের ধারে। হ্রদের পাশে রয়েছে একটি উপাসনাস্থল। অসংখ্য দীপ জ্বলছে সেখানে।
রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন – মূলত কমলা লেবুর বাগানের জন্য এই জায়গাটি বিখ্যাত। ২০ টাকার টিকিট কেটে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখা যাবে রিম্বি নদীর মনোরম দৃশ্য। এখানে রুম নিয়ে থাকাও যায়।
গ্লাস স্কাইওয়াক– ৭,২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, ভারতের প্রথম গ্লাস স্কাইওয়াক। ওপর থেকে তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, যদি খুব ভাল ওয়েদার থাকে।
এখানকার আরেকটা বিশেষত্ব হল, চেনরেজিগের দুর্দান্ত ১৩৭ ফুট লম্বা মূর্তি এবং এই মূর্তি পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য রয়েছে ৭১ টা সিঁড়ি, যার দুদিকে golden prayer wheel রয়েছে সার দিয়ে।চেনরেজিগ, অবলোকিতেশ্বর নামেও পরিচিত। স্থানীয়দের কথায় তিনি করুণার প্রতিমূর্তি। তিনি সকলের প্রার্থনা শোনেন।
রাবডান্সে রুইন্স – এটিকে সিকিমের পুরোনো রাজধানীও বলা যায়। শ্যাওলা ধরা রাস্তা ধরে জঙ্গলের পথ দিয়ে প্রায়১৫-২০ মিনিট হাঁটার পর রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ রাবডান্সে রুইন্সে পৌঁছনো যাবে। সিকিমের দ্বিতীয় রাজধানী রাবডান্সে। ১৬৭০-১৮১৪ পর্যন্ত এটিই ছিল সিকিমের রাজধানী। ফুন্টসোগ নামগ্যাল সিকিমের প্রথম রাজা বা চোগিয়াল ১৬৪২ সালে ইউকসোমে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ১৬৭০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, পুত্র ২য় রাজা বা চোগিয়াল তেনসুং নামগ্যাল রাজধানী রাবডান্সেতে স্থানান্তরিত করে। কিন্তু রাবডান্সে নেপাল সীমান্তের একদম কাছাকাছি থাকায়, বারবার নেপালের আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়। অবশেষে লিবারেটিং আর্মি অব নেপাল রাবডান্সেকে একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। গোটা রাজধানীটা একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চোরটেনগুলি, অর্থাৎ প্রার্থনাস্থল বা উপসনাস্থল।
এখান থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। archaeological survey of India দ্বারা এই সৌধটিকে জাতীয় গুরুত্ব হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পেমায়াংটসে মনাস্ট্রি সিকিমের প্রাচীনতম মনেস্ট্রীগুলির মধ্যে একটি যা রাবডান্সে রুইন্সের কাছেই। হেলিপ্যাডে ফেরার পথেই যাওয়া যাবে।
ইউটিউব চ্যানেল আমরা ত্রয়ী-র (amra troyee)একটি ভিডিওতে পেলিং নিয়ে দুদিনের ট্রিপের একটি সুন্দর ভিডিও রয়েছে। খুব সহজে বুঝিয়ে বলা আছে কীভাবে যেতে হবে কোথায় থাকতে হবে। নীচে লিঙ্কটা দেওয়া রইল।👇🏻
ছবি : সুমন ঘোড়াই