ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩৩ তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি!

আজ ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩৩ তম প্রয়াণ দিবস। এই উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে। কলেজস্ট্রিটে বিদ্যাসাগর উদ্যানে তাঁর মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদা কালচারাল এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ারের গেটের সামনে বিদ্যাসাগরের পূর্ণাঙ্গ মূর্তির পাদদেশে মাল্যদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মেচেদা বিদ্যাসাগর গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র,ডাঃ নর্মান বেথুন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং চাঁইপুর বিদ্যাসাগর দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী কমিটির পক্ষ থেকে বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়।জলপাইগুড়ির কদমতলায়ও শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম চিরস্মরণীয় মনীষী। পরনে ধুতিচাদর, পায়ে চটিজুতো, মাথায় সামনের দিকে কামানো— ছবি, ভাস্কর্য সর্বত্র সেই চিরপরিচিত মূর্তি। নিতান্ত সাদামাটা সাবেকি পোশাকেই বর্ণময়, দীপ্ত তাঁর রূপ। আজও তাঁর কর্মকাণ্ড মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়, ভরসা জোগায়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সূত্রে ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং ১৮৫৮ সালে সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। নিতান্ত সাদামাটা গ্রামীণ পোশাক বাপঠাকুর্দার মতোই অঙ্গসজ্জা করতেন তিনি।বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রলাল দত্ত তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন যে, তখন ‍উৎসবে, অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরা পরতেন চিনা কোট। বুকটা লম্বা ঘেরের কাপড় দিয়ে মোড়া, সামনে গোলাকার হাড়ের বোতাম। কে‍উবা পিরান পরতেন। বৃদ্ধেরা বেনিয়ানও পড়তেন, তাতে বুকটা দু’ভাঁজ করে ফিতে দিয়ে বাঁধা হত। এই সব পোশাকের সমারোহে ধুতি-চাদর পরা বিদ্যাসাগর ছিলেন একেবারে বেমানান।বিদ্যাসাগরের ঠাকুরমা দুর্গা দেবী টেকুয়া ও চরকায় সুতো কেটে সেই সুতো বেচে দিন চালাতেন। তাঁর স্বামী রামজয় তর্কভূষণ দেশত্যাগী হয়েছিলেন। সে কালে অনেক অসহায়া মহিলা এ ভাবে সংসার চালাতেন। বিলাসে বীতস্পৃহ নাতি বিদ্যাসাগরের মোটা কাপড় ও চাদরই ছিল সম্বল। মা চরকায় সুতো কেটে কাপড় তৈরি করে পাঠাতেন। সেই কাপড় পরে কলেজ যেতেন ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা। এই ধুতি-চাদরকে খাঁটি বাঙালিয়ানার নিদর্শন বলে মেনে নিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর পিতৃদেব ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোশাক ছিল একই রকম। গ্রামে যে পোশাক ব্যবহার করেছেন শহরেও তাই। তাঁর ছেলের শহরে কলেজে পড়ার সময়ও ওই একই পোশাক। সংস্কৃত কলেজের ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র।পোশাকের মতোই অবিচ্ছেদ্য তাঁর চটিজুতোও। কলকাতা শহরে ‍উনিশ শতকের মিশ্র সংস্কৃতিতে পোশাকআসাক, বর্ণময় ব্যক্তিদের ‍উপস্থিতি— এই সব কিছুর মধ্যে বিদ্যাসাগর তাঁর নিজস্বতা এবং গ্রামীণ সত্তার নিখাদ ‍ঔজ্জ্বল্যটি বজায় রেখেছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পোশাকের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিত্ব বাঙালির হৃদয়ে এমন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে যে, নাটক বা সিনেমায় এই পোশাক ছাড়া বিদ্যাসাগর চরিত্র ভাবা অসম্ভব। ঈশ্বরচন্দ্র তেজস্বী পুরুষ। বাঙালির আইকন। স্বদেশি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধির জন্য তিনি ইংরেজদের সঙ্গে বার বার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নানা কাজ আদায় করেছেন। ধুতি-চাদর কিংবা চটি তো ‍উপল‌ক্ষ, এ সব কিছুর অন্তরালে ছিল দেশ ও জাতি সম্পর্কে তীব্র গর্ববোধ। প্রচলিত সমস্ত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের কথা ভেবেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *